মানুষের শরীর নানা রকম যন্ত্রের সমাবেশ। যার মধ্যে অন্যতম হৃদযন্ত্র। কিন্তু ব্যস্ততার বা অবহেলার কারণে শরীরের এ গুরুত্বপূর্ণ
অংশটির যত্ন নেওয়ার কথা ভুলে যাই আমরা। ফলে দেখা যায়
হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া সহ অনুষাঙ্গিক নানা উপসর্গ। তবে অসুস্থ হওয়ার আগে এর প্রতিকার জানা থাকলে অনেক দুর্ঘটনা
এড়ানো যায়। আর এ জন্য জানা চাই কিছু নিয়ম-কানুন। জেনে নিন হৃদযন্ত্র ঠিক রাখার ৮টি উপায় ও খাবারের তালিকা।১. নিয়মিত ব্যায়াম : শরীর তরতাজা রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো
বিকল্প নেই। প্রতিদিন কমপক্ষে আধাঘণ্টার ব্যয়াম আপনার
হৃদপিণ্ডকে রাখবে সুস্থ। প্রতিদিন হাটতে হবে।
২.
পরিমিত লবণ : খাবারে মাত্রাতিরিক্ত লবণ শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। যা হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়
কয়েকগুণ। তাই রান্নায় লবণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। মনে রাখতে হবে দৈনিক ছয় গ্রামের বেশি
লবণ কিছুতেই নয়।
৩. ধূমপান
থেকে বিরত: বলা হয়ে থাকে ধূমপানে বিষপান। কেননা এই অভ্যাসটি হার্টের সমস্যার
মতো ভয়াবহ অসুখের দিকে ঠেলে দেবে আপনাকে।
৪. পানে সংযমী হোন : অতিরিক্ত অ্যালকোহল শুধু রক্তচাপ নয় কলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। তাই পানের আয়েশি অভ্যাস ছেড়ে সংযমী হোন।
৫. নিয়ন্ত্রিত ওজন : আপনার শরীরের মাত্রারিক্ত ওজন হৃদয় বহন করতে পারবে না। তাই ওজন কমান। ওজন নিয়ন্ত্রণে আনুন। হার্টের সমস্যার সঙ্গে অন্য অনেক শারীরিক জটিলতাও পালাবে।
৪. পানে সংযমী হোন : অতিরিক্ত অ্যালকোহল শুধু রক্তচাপ নয় কলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। তাই পানের আয়েশি অভ্যাস ছেড়ে সংযমী হোন।
৫. নিয়ন্ত্রিত ওজন : আপনার শরীরের মাত্রারিক্ত ওজন হৃদয় বহন করতে পারবে না। তাই ওজন কমান। ওজন নিয়ন্ত্রণে আনুন। হার্টের সমস্যার সঙ্গে অন্য অনেক শারীরিক জটিলতাও পালাবে।
৬. তাজা ফল রাখুন খাবারের তালিকায় : তাজা
ফলমূলে থাকে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন
ও খনিজ উপাদান। পাশাপাশি স্বল্প মাত্রায় ক্যালরি থাকার কারণে তা আমাদের
হৃদযন্ত্রকে সতেজ ও সবল রাখে।
৭. জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন : জাঙ্ক ফুডে
থাকে প্রচুর চর্বি। যা কলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ধমনিতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত করে। তাই এ ধরনের খাবার থেকে নিরাপদ
দূরত্বে থাকুন। এর পরিবর্তে বাদাম অথবা তাজা ফলমূল খান।
৮. পর্যাপ্ত ঘুম : ভালো ঘুম নাকি
অর্ধেক রোগ সারিয়ে দেয়। কথাটা কিন্তু মিথ্যা নয়। শরীরের নানা রকম সমস্যায় শক্তিশালী
অস্ত্র হিসেবে কাজ করে ঘুম। কারণ আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন আমাদের শরীরের যন্ত্রগুলো
ফর্মে ফিরে আসে। তাই ঘুমের সঙ্গে কোনো আপস নয়।
হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি
প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া। কিছু কিছু খাবার যা হার্টের রোগ
হওয়ার ঝুঁকি যেমন বাড়ায় তেমনি কিছু খাবার হার্টের জন্য উপকারী, দরকারিও বটে।
সম্পৃক্ত
চর্বি এবং কোলোস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে
হবে: যেসব খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি, ট্রান্সফ্যাট এবং কোলোস্টেরলের পরিমাণ
বেশি সেগুলো অবশ্যই আমাদের খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
কম
চর্বিযুক্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে: আমাদের দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে হবে। কিন্তু এ জন্য এমন প্রোটিন গ্রহণ করতে
হবে যেখানে চর্বি নেই কিংবা চর্বির পরিমাণ খুব কম। যেমন-চর্বিমুক্ত খাসি, গরু কিংবা মুরগির মাংস, মাছ, ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদি। ক্রিমমুক্ত বা সর ছাড়া দুধ খেলেও
যথেষ্ট প্রোটিন পাওয়া যায়।
খাবারে
লবণের পরিমাণ কমাতে হবে: অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। উচ্চরক্তচাপ হূদরোগের প্রধান কারণ। এ জন্য খাবারে লবণের পরিমাণ কম রাখা
খুব গু্রুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের খাদ্যে সব মিলিয়ে আড়াই গ্রামের
বেশি অর্থাৎ এক চা-চামচের কম লবণ থাকা উচিত। যাদের বয়স ৫১-এর বেশি এবং যাদের
উচ্চরক্তচাপ,
ডায়াবেটিস কিংবা কিডনির সমস্যা
আছে তাদের কখনোই প্রতিদিন দেড় গ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করা উচিত নয়।
রসুন: রসুন আকৃতি ও প্রকৃতিগতভাবে আমাদের হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রসুনকে
হার্টের মহৌষধ বলে অভিহিত করেছেন। রসুনে বিদ্যমান এলিসিন নামক উপাদান হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালীর
প্রতিবন্ধকতা (Atherosclerosis) অপসারণ ও প্রতিহত করে এবং হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করে। হৃদরোগ প্রতিরোধে ১-৩ কোয়া রসুন ২৫০ মিলি
পানিতে রেখে সেই পানি ৮ ঘণ্টা পর পর খেতে হবে। আর পাউডারের ক্ষেত্রে ৪০০-১২০০ মি·গ্রাম পরিমাণ খেতে হবে।
টমেটো
:আমাদের
হৃৎপিণ্ডের যেমন চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে, তেমনি টমেটোরও চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। হার্ট ও টমেটো উভয়ের রং লাল। সম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণ হয় যে, টমেটোতে বিদ্যমান লাইকোপেন হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং
রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে খুবই কার্যকর। হৃৎযন্ত্রের সুস্থতার জন্য পথ্য হিসেবে প্রতিদিন ৩টি করে
টমেটো আর এক কাপ পরিমাণ টমেটোর সস খেলে হৃৎযন্ত্র সুস্থ থাকে।
কালো
আঙ্গুর: কালো আঙ্গুরের থোকা দেখতে অনেকটা
হৃৎপিণ্ডের মত এবং প্রতিটি আঙ্গুর দেখতে আমাদের রক্তের কোষের মত। গবেষণা থেকে প্রমাণ হয় যে, আঙ্গুরে বিদ্যমান প্রোএন্থোসায়ানিডিন হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা
বাড়াতে, হৃদরোগ প্রতিরোধে এবং রক্ত পরিশুদ্ধকরণে সহায়তা করে। প্রতিদিন ৩-৯টি কালো আঙ্গুর সেবনে
উপরোল্লিখিত উপকারসমূহ পাওয়া যায়।
হালাল
প্রাণীর হৃৎপিণ্ড: হৃৎপিণ্ডের কোন জটিলতায় হালাল
প্রাণীর হৃৎপিণ্ড কার্যকর ও উপকারী ভূমিকা পালন করে। সপ্তাহে ১ দিন ৩০-৩৫ গ্রাম পরিমাণ
হালাল প্রাণীর হৃৎপিণ্ড অন্যান্য সহায়ক ভেষজ, আদা, যয়তুন ও পাঁচফোরনসহ স্যুপ করে ৩ মাস
খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
শরিফা
/ আতা: হৃৎযন্ত্রের সমস্যায় আতাফলের লোকজ
ব্যবহার প্রাচীন। সম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণ হয় যে, এ ফলগুলোতে বিদ্যমান এপোরফিন ও অক্সোএপারফিন রক্তনালীতে
প্লাটিলেটের জমাটবদ্ধতা ও রক্তনালীর সংকোচন প্রতিহত করে এবং হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা
বৃদ্ধি করে। তবে এ জন্য প্রতিদিন ১টি করে শরীফা অথবা আতাফল খেতে হবে।
কাজুবাদাম
:এ ফলে
রয়েছে কার্ডল, কার্ডানল, মিথাইল কার্ডল প্রভৃতি রাসায়নিক উপাদান, যা হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে উপকারী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন ৩-৯টি কাজুবাদাম বাঁটা ১ কাপ
পানিতে ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
Sign up here with your email