জলবসন্ত যা আমাদের কাছে সাধারণত চিকেন পক্স নামেই বেশি পরিচিত। এই রোগ ছড়ায় ভ্যারিসেলা জোস্টার নামক জীবাণুর মাধ্যমে। ছোঁয়াচে এই রোগ সাধারণত শিশুদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। তবে প্রাপ্ত বয়স্করাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রাপ্ত বয়স্ক যারা এই রোগে আক্রান্ত হন তাদের কষ্টটাই সবচেয়ে বেশি। জ্বর, মাথা ব্যাথ, সারা শরীরে র্যাশ এসব তো আছেই, সেই সাথে থেকে যায় দীর্ঘদিন চেহারায় এই রোগের রেখে যাওয়া দাগ বহন করার ভয়টাও।
কিভাবে বুঝবেন আপনার চিকেন পক্স হয়েছে?
যেহেতু এটি ছোঁয়াচে রোগ এবং বায়ুবাহিত কাজেই আক্রান্ত ব্যাক্তির হাঁচি-কাশি, শারীরিক সংস্পর্শ, বা একই রুমে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অবস্থান করলে সহজেই আপনি এর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। প্রাথমিক অবস্থায় আপনার পিঠ এবং ঘাড়ের দিকটায় ব্যাথা করবে। জ্বর জ্বর ভাব, রাতে হালকা জ্বর আসতে পারে। এর পর শরীরে একটা দুটো ফুসকুড়ি দেখা দিবে যা প্রথমদিকে ব্রণের মত দেখায়। এর পর ধীরে ধীরে সারা শরীরে এই ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়ে। জ্বর থাকবে, সাথে মাথা ব্যাথা এবং শরীরে অস্বস্তিকর ভাব। এই ফুস্কুরিগুলো ১-২ দিনেই পেকে যায়। অনেকটা পানি ভর্তি থলের মত, পরে ফেটে গিয়ে এর উপর কালো আবরণ জমে যায়।
বুঝতে পারার পর কি করবেন?
খুবই ভাল হয় যদি একদম প্রাথমিক অবস্থায় বুঝে নিতে পারেন রোগের লক্ষণ। সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন। আপনার সন্দেহের কথা চিকিৎসককে খুলে বলবেন। এবং চিকিৎসকের দেয়া প্রত্যেকটি ওষুধ এবং মলম নিয়মিত ব্যবহার করবেন। আপাতত এমন কোন ওষুধ নেই যা ব্যবহার করলে ২-১ দিনেই সুস্থ হয়ে যেতে পারবেন। আপনাকে কিছুটা কষ্ট সহ্য করতেই হবে। তবে সুখের কথা হচ্ছে যে একবার চিকেন পক্স বা জলবসন্তে আক্রান্ত হয়, পরবর্তীতে তার আর এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা থাকে না বললেই চলে।
কি কি খাবেন এই রোগে আক্রান্তকালীন সময়ে?
সাধারণ খাবার, যা আপনি নিয়মিত খান। তবে গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ ইত্যাদি, এবং তৈলাক্ত খাবার বর্জন করুন। শাকসবজি, পাকা ফল বেশি করে খাবেন। আর পানি প্রচুর পরিমাণে। যতটা সম্ভব তরল খাবার খেতে চেষ্টা করুন ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পেতে। আর অনেক সময় মুখের ভেতরের তালুতে এমনকি গলার ভেতরের দিকেও ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। তখন সাধারণ খাবার খাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। স্যুপ বা এজাতীয় খাবার তখন খুবই উপকারী।
অন্যান্য সতর্কতাঃ
এই ফুসকুড়িগুলো কোন অবস্থাতেই নখ দিয়ে চুলকাবেন না। রোগ সনাক্তের প্রথম দিকেই হাত পায়ের নখ কেটে ফেলুন ছোট করে। সম্ভব হলে চুল ফেলে দিন মাথার। ঠাণ্ডা স্থানে থাকতে চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব। রোদে যাওয়া যাবে না কোনভাবেই। চুলকানি অসহ্য হলে একটি পাতা সহ নিমের ডাল রাখতে পারেন, যা হালকা করে বুলিয়ে নেয়া যাবে আক্রান্ত স্থানে। নিমের ঔষধি গুন এই ক্ষেত্রে সাহায্য করে। গ্রাম্য কিছু কুসংস্কার আছে যেমন, কাঁচা দুধ খাওয়া, বিভিন্ন লতা গুল্মের নির্যাস আক্রান্ত স্থানে লাগানো, সোনা রুপা ভেজানো পানি ইত্যাদি ইত্যাদি পরিহার করুন। ডাক্তারের দেয়া ওষুধেই আপনি সুস্থ হবেন।
দাগ কিভাবে দূর করবেন?
চিকেন পক্সের দাগ চেহারায় আজীবন বয়ে বেড়াবার কোন মানেই হয় না যখন আপনার হাতের কাছেই এর সমাধান আছে। প্রতিদিন গাজর খাবেন। মধু লাগাতে পারেন আক্রান্ত স্থানে দিনে ৩-৪ বার। ডাবের পানিও এই ক্ষেত্রে সহায়ক। ডাবের পানিতে দিনে দুবার করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অথবা ডাবের পানিকে ডিপ ফ্রিজে রেখে বরফ বানিয়ে দাগে লাগাতে পারেন। এতে আপনার টাকা এবং শ্রম বাঁচবে। চন্দন বেটে মুখে লাগালেও এর দাগ দূর হয়। মুখের দাগ দূর করার জন্য মাখন লাগাতে পারেন। আর এতেও যদি দাগ না যায় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা মলম ব্যবহার করলেই ফল পাবেন।
Sign up here with your email